আমার বাবা

বাবারা এমনই হয় (জুন ২০১৯)

শফিক নহোর
  • 0
  • ৪৭
বিসিএস পরীক্ষা সামনে আজ দু’বছর ধরে অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে—না । অনেক গুলো ছেলে-মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে হয় , আমার নিজের সংসার চালানোর জন্য । সে খানে নিজেকে একটু সময় দেওয়া সত্যি অনেক কঠিন ব্যাপার ।সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হলাম আমি। তার পরেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলাম। শেষ পর্যন্ত আমার দ্বারা সম্ভব হলো না । বিসিএস পরীক্ষায় টিকে থাকা ।না পড়লে যা হয় আর কী ?'

ভালো একটা চাকরির জন্য ঢাকা চলে আসলাম ২০০৯ সালের শেষের দিকে । উত্তর বাড্ডার আলীর মোড়ে একটি টিন-সেট বাসায় ,বন্ধু সেলিমের রুমে উঠলাম । ছোট্ট একটি রুম , লোক সংখ্যা আমাকে দিয়ে পাঁচজন। শরীরের তাপমাত্রায় মনে হয় রুমের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি । বাকী চারজন ও আমার মত ছাত্র । বাড়ি থেকে আসবার সময়, মা' একটা পলিথিনে কিছু চিড়া আর মুড়ি দিয়েছিল। পথে যেন আমি এগুলো খাই , একটু পানি খেয়ে নেই । মা বারবার বলেছিল ; ‘ খবরদার না খেয়ে থাকিস না বাজান ।' বাবার অজান্তে হাঁস , মুরগির ডিম বিক্রি করা ২৪ টাকা আমার হাতে জোর করেই গুজে দিয়েছিল সেদিন । আসার সময় বার-বার করে বলেছিল ।
‘ খোকা পথে ক্ষুধা লাগলে কষ্ট করিস না ।' কিছু কিনে খাবি , বাপ আমার !'
সেই চিড়া মুড়িও পরের দিন সন্ধ্যায় দেখলাম শেষ। মানবিকতা অভাবের কাছে হয়তো থাকে না । টাকার অভাবে , মিল বন্ধ করে দিয়েছে তাই বাকি চারজন আমার চিড়া ,মুড়ি শেষ করে দিয়েছে দুপুরেই । আহা রে স্বপ্নের ঢাকার শহর ।

বেসরকারি একটা নামকরা প্রতিষ্ঠানে আমার চাকরি হলো ।, বেতন আট হাজার পাঁচশত টাকা। প্রথম দিকে মন সায় না দিলেও যখন শুনলাম , থাকার জন্য বহুতল ভবন ফ্রি আছে । শুধু খাবার জন্য পনের শত টাকা লাগবে প্রতি মাসে ।, এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম । ঢাকার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম আমার নতুন কর্মস্থলে। প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তার নিকট আমার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিলাম । আমাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ এ স্বাক্ষর করতে হলো । সঙ্গে তিন কপি সদ্য তোলা ছবি । হাউজ কিপিং এর একজন ভদ্রলোক আমাকে এখান কার সি-মেস এ নিয়ে গেল সঙ্গে করে , এবং বি-২ ভবনে রুম দেখিয়ে বললেন ,
‘ আপনি এখন থেকে এখানে থাকবেন।'
‘ আমি মাথা নেরে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম , মুখে মেকি হাসি নিয়ে । আজকাল আমরা বিশুদ্ধ হাসি আর হাসছি কোথায় সব কিছুই তো মেকি ।'

মাশআল্লাহ শুরু হল আমার নতুন কর্মময় জীবন। কিন্তু সারা রাত ছারপোকার কামড়ে ঘুমাতে পারিনি । সকালে গোসল করে সি-মেসে খেতে গেলাম । সি- টাইপ মেসের বাবুর্চি সাবের পাশা বললো , স্যার চার"শ মানুষ ২৫০ গ্রাম সরিষার তেল দিয়ে আলু ভর্তা করছি দারুণ স্বাদ হয়েছে !' খাবারের প্রতি রুচিই উঠে গেল । তবুও অল্প কিছু মুখে দিলাম ।

বাড়ি থেকে আমার প্রতি সবার একটা চাহিদা ছিল অন্য রকম , আমি সাত বোনের একমাত্র আদরের ছোট ভাই ।, সহ্য করতে হয়েছে সময়ে অসময়ে কোন না কোন বোনের ছেলে মেয়েদের বায়না । তার পরেও বাবা-মা চাইতো আমি ওদের আরো দেই । কিন্তু ?' আমি যখন আমার বেতনের দিকে তাকাই তখন বড্ড অসহায় মনে হয় । কারো জন্য কিছুই করতে পারি— না। বাবা অসুস্থ মানুষ । বয়স তো আর কম হলো না। এই বয়সে একটু ভাল খাবার দেওয়া উচিত কিন্তু পারি না । চেষ্টা করছি সরকারি একটা চাকরির জন্য । সরকারি চাকরির বয়স ও আমার বেশি দিন নেই। প্রাইমারী স্কুলের একটা দরখাস্ত করেছিলাম । অনেকদিন হলো পত্রিকায় দিয়েছে দেখলাম লিখিত পরীক্ষা সামনে মাসে !' পরীক্ষা দিলাম , রেজাল্ট হলো । বাবাকে ফোন দিয়ে বললাম। বাড়ির সবাই খুশি । বাড়ি ছাড়া অন্য কোন জায়গা আমাদের নেই যে বিক্রয় করে চাকরি নিবো। বাধ্য হয়ে বিয়ে করেই টাকা নিতে হল । বিয়ের-দিন রাতে যদিও বৌ কে বলেছিলাম ।,
-তোমাদের বাড়ি থেকে যে টাকা দিবে আমি নিয়েছি , চাকরি পাবার পর , মাসে মাসে টাকা ফেরত দিয়ে দিবো। তুমি মন খারাপ করোনা প্লিজ।


আমার স্ত্রী ও অনেক ভাল ছাত্রী , সব বিষয় গুলোতে গোল্ডেন প্লাস সহ প্রথম বিভাগ। বাবা এলাকার একজন কে ধরে ঢাকা এসেছে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে । অনেক ঘোরাঘুরির পর মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারছেন এবং মন্ত্রীও চাকরি হয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাবা আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন ।‘‘এবার তোর চাকরি হবেই হবে –ই মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমার হাত ধরে ।’’

চিঠি এসেছে ভাইভা দিবার জন্য । আগের দিন তৈরি হলাম বাড়িতে যাবার জন্য কিন্তু কাজের চাপে যেতে পারলাম না , অফিস শেষ করেই যেতে হলো। বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি গাড়িতে , বাড়ি যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে তাই তমাদের বাসায় উঠবো ,সকালে ভাইভা দিয়ে তোমার বৌমা কে নিয়ে বাড়ি চলে আসব , শেষ পর্যন্ত তাই করলাম।

ভাইভা বেশ ভালোই হয়েছে আমার চারটা প্রশ্ন করেছে সঠিক উত্তর দিয়েছি । অন্য লোকদের কাছে জানতে চাইলাম আপনাদের কয়টা প্রশ্ন করেছে । আমাকে প্রশ্ন করে নাই । নাম শুনেই বলেছে আপনি এখন আসুন । চার পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বললাম ,সবাই একই উত্তর দিল । কয়দিন পরেই ভাইভার ফলাফল বের হলো ,
পত্রিকায় অনেক বার দেখলাম , নেট এ দেখলাম আমার রোল নং- পেলাম না । বাবাকে কথাটা বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ।

বাবা আমাকে ফোন করছে , আমি ফোনের কল রিসিভ ধরতে পারছি—না হাতে কোন শক্তি পাচ্ছি না । আমার হাত অচল হয়ে আসছে , এমন লাগছে কেন ?' আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ;
‘ সেদিন চোখের জলের বিন্দুমাত্র দাম ছিলনা কোন মানুষের কাছে । আবেগি দুটি চোখ স্বপ্ন ভুলে গিয়েছিল সেদিন । অঝরে শুধু পরাজয়ের অশ্রু ঝরেছিল ঝর্ণাধারার মত অবিরত । জীবনে এমন পরাজয় সবাই শয়তে পারে না । তবুও আমি ফোন ধরবার চেষ্টা করলাম ।'

বাবা হাউমাউ করে চিৎকার করতে লাগলো । মনে হলো আমি মারা গিয়েছি । আমার চোখের কিনার দিয়ে অঝরে অশ্রুজল প্রবাহিত হতে লাগলো ।, আমার বৌ ও গোপনে গোপনে খুব কান্না করছে ।

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো –‘ বাজান রে তোর মা মরে যাবার সময় ও আমি এত কান্না করি নাই । এত কষ্ট পেয়ে ছিলাম না তার চলে যাওয়াতে , তার চেয়ে শতগুণ কষ্ট পেয়েছি আজ তোর চাকরি টা না হওয়াতে । ‘ শুনলাম রহিমের বাবা আমার চেয়ে একলক্ষ টাকা মন্ত্রীকে বেশি দিয়েছে বলে ওর চাকরি হয়েছে । স্বাধীনতার সময় পরের টাকা চুরি করে বড়লোক হয়েছে । তাদের ছেলের তো বেশি টাকা দিয়েই চাকরি হবে ।'

বাবা আমাকে ভেঙে পড়তে দেয়নি কখনো । বাবা সব সময় আমার সঙ্গে বন্ধুর মত মিশে থাকতো ।
এক-বিঘা জমি বিক্রি করে , আমি অনলাইন ব্যবসা শুরু করি । ক’য়েক বছরের ভিতরে আমি যুবক গোল্ডএওয়ার্ড পেলাম । আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে অনলাইন ব্যবসা করছে । পরিবারের সবাইকে কিছু না কিছু করা প্রয়োজন । ‘ বাবা একা ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ।' বাবা উপলব্ধি করতো একা কখনো সংসার করা সম্ভব না । হাল ধরবার জন্য । সংসার সবাইকে সহযোগিতা করা উচিত । যেমন প্রতিনিয়ত আমার স্ত্রী আমাকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করছে । সেদিনের সেই অশ্রু ভেজা চোখ আজ স্বপ্ন দেখে শত মানুষের হৃদয় ভাঙা স্বপ্নকে জোড়া দিতে । ‘ বাবার মত বন্ধু আছে বলেই আমার জীবনের প্রতিটি মহুর্তে আনন্দে ভেসে যায় পরমানন্দে ।'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ তামিম হোসেন golpota valo lagce tai apnar golpota amar fbte Post korchi. (দীপ্ত কবি)
ধন্যবাদ বাদ আপনাকে ।
মোহাম্মদ তামিম হোসেন Onek shundor ekta golpo amar cokhe pani cole asche apnar jnno suvo kamona roelo vai.
কৃতজ্ঞতা হে প্রিয় ভালবাসা রইলো আপনার জন্য ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমার বাবা

০৩ মে - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪